আধুনিকতার দাপটে বিলুপ্তির পথে করাতি সম্প্রদায়ের পেশা!
গাছের মোটা ডাল আর দড়ি দিয়ে তৈরি কাঠামোর ওপর বিশাল এক বৃক্ষের গুড়ি/খন্ড হেঁকে হেঁকে উঠানো হতো। তাতে সুতো দিয়ে সাইজ মোতাবেক দাগ কাটা হতো, এতে ব্যবহার করা হতো টেপ রেকর্ড বা রেডিওতে ব্যবহৃত ডেমেজ বেটারির গুরো।
একজন করাতি উপরে, আর নিচে দুইজন। হাতলযুক্ত করাতের টান উপরে-নিচে ছন্দবদ্ধভাবে চলতে থাকে, আর নিচে ঝরে পড়ে কাঠের কোমল গুঁড়া। বড় কোনো গাছের ছায়ায় করাতিরা এই পরিশ্রমী কাজটি চালিয়ে যেতেন, শরীর বেয়ে ঘাম ঝরতো। করাতের গতি ঠিক রাখতে মাঝে মাঝে নেওয়া হতো বিরতি।
বিশাল বৃক্ষের খন্ডকে, তাদের অগাধ পরিস্রম আর শৈল্পিকতায় চিরে নন্দনীয় কাঠের সেপ তৈরি করে দিতেন তারা। আর তা দিয়ে তৈরি হতো গৃহের সৌন্দর্য, গৃহের পছন্দনিয় আসবাবপত্র।
একসময় গ্রামবাংলার আনাচে-কানাচে করাতিদের এমন দৃশ্য ছিল চিরচেনা। চোট বড় সকেলেই করাতিদের গাছ চিরানো দেখতে পছন্দ করতেন। কিন্তু আজ আর তা চোখে পড়ে না। বৈদ্যুতিক করাতকল আধিপত্য বিস্তার করায় ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে এই পেশা। বর্তমান প্রজন্মের কাছে এটি অজানা হলেও, একসময় ঘরবাড়ি নির্মাণ থেকে শুরু করে আসবাব তৈরির জন্য করাতি সম্প্রদায়ের ওপরই নির্ভর করতে হতো।
২০-২৫ বছর আগেও বৈদ্যুতিক স’ মিলের তেমন প্রচলন ছিল না। বড় গাছ কাটার জন্য করাতিদেরই খুঁজে নেওয়া হতো। তারা গ্রামে গ্রামে ফেরি করে গাছ কাটার কাজ করতেন, কখনো গানের তালে তাল মিলিয়ে করাত চালাতেন, যা শিশু-কিশোর থেকে বৃদ্ধদেরও আকর্ষণ করত।
কালের বিবর্তনে আধুনিক প্রযুক্তির কাছে হেরে গেছে করাতির ঐতিহ্যবাহী পেশা। দ্রুত, কম খরচে কাজ সম্পন্ন করার প্রবণতায় করাতকলের দাপট বেড়েছে। গ্রামবাংলার বাজার ও মহল্লাগুলোতে গজিয়ে ওঠা অসংখ্য করাতকল এখন সহজেই কাঠ চিরে দিচ্ছে, ফলে করাতির প্রয়োজনীয়তা বিলীন হয়ে গেছে।।
Leave a Reply